ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ আগুন লাগার ঘটনায় আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

গঠিত কমিটি সৃষ্ট দুর্ঘটনার কারণ, দুর্ঘটনার ফলে সংগঠিত ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এবং অনুরূপ দুর্ঘটনা রোধকল্পে ভবিষ্যতে করণীয় বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিএসসির সচিব আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহে দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়।

গঠিত তদন্ত কমিটিতে বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফকে সভাপতি করা হয়েছে। সদস্যসচিব করা হয়েছে বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (ডিপিএ অ্যান্ড সিএসও) মঈন উদ্দিন আহাম্মদ মজুমদারকে।

কমিটির বাকি ছয় সদস্যের মধ্যে রয়েছেন– বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের প্রতিনিধি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্রতিনিধি, বিএসসি আঞ্চলিক কার্যালয়, ঢাকার পরামর্শক (মেরিন সুপার-ডেক), বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (মেরিন ওয়ার্কশপ), বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (কার্গো সুপারভিশন অ্যান্ড অপারেশন) এবং বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (জাহাজ মেরামত)।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে ‘বাংলার সৌরভ’ জাহাজে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

দুর্ঘটনা নিয়ে শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএসসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘কোন বিস্ফোরণ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। এরপরও জাহাজটির এক সঙ্গে চার স্থানে আগুন জ্বলে উঠেছে। গ্যাস ফর্ম কিংবা অন্য কোনও কারণে এ আগুন লাগার ঘটেনি। এ ছাড়াও যখন জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, ঠিক একইসময়ে পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোটও যায়। তাই আমরা ধারণা করছি, এটি নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। এরপরও সবকিছু তদন্তের পরেই জানা যাবে। এ ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের সময় সমুদ্র খুব উত্তাল ছিল। বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাতটি টাগবোট একযোগে অপারেশন পরিচালনা করে। পরবর্তী সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাক টু ব্যাক (পরপর) এ ধরনের দুটি ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে এটি কোনও নাশকতা কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

‘বাংলার সৌরভ জাহাজে তেল ছিল ১১ হাজার ৫৫ টন। জাহাজে জনবল ছিল ৪৮ জন। আগুনের পর কেউ কেউ আত্মরক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া জাহাজের স্টুয়ার্ড পদে কর্মরত সাদেক মিয়া (৬০) নামে একজন মারা গেছেন। উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে ‘বাংলার সৌরভ’ জাহাজে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মারা যাওয়া স্টুয়ার্ড সাদেক মিয়া (৬০) কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট এলাকায় মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানায় ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’ নামে তেলবাহী দুটি জাহাজ রয়েছে। এগুলো সাগরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ থেকে তেল নিয়ে বন্দরে পৌঁছানোর কাজ করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে বন্দরের ডলফিন জেটিতে ‘বাংলার জ্যোতি’তে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিন জন মারা যান।

ভয়েস/আআ